হাতিম আল তায়ী: আরবের কিংবদন্তি কবি ও দানের প্রতীক

হাতিম আল তায়ী ছিলেন আরবের এক মহান কবি ও দানের প্রতীক। তার উদারতার কাহিনি আজও ইতিহাসে অমর।
© Times News Service

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও সংস্কৃতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বহু মহান ব্যক্তি। Hi Weekly-র Heroes of Arabia সিরিজের মাধ্যমে আমরা তাদের সম্পর্কে জানতে পারি, যারা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এই সংখ্যায় আমরা পরিচিত হবো কিংবদন্তি কবি হাতিম আল তায়ী-র সঙ্গে, যার দয়ার খ্যাতি আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

জন্ম ও শৈশব

হাতিম আল তায়ী ছয় শতকে জন্মগ্রহণ করেন আল তায়ী গোত্রে, যা বর্তমান সৌদি আরবের হাঈল অঞ্চলে বসবাস করত।

কথিত আছে, হাতিমের মা যখন সদ্য বিবাহিত ছিলেন, তখন এক রাতে তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে তাকে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়— হয় তিনি দশজন বীর সন্তান জন্ম দেবেন, অথবা একজন এমন সন্তান পাবেন, যে উদারতা ও দয়ায় সকলকে ছাড়িয়ে যাবে। হাতিমের মা দ্বিতীয়টি বেছে নেন।

এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিল। একদিন হাতিম যখন পারিবারিক উট চারণে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি খালি হাতে ফিরে এলেন, তবে তার মুখ আনন্দে উজ্জ্বল ছিল। তিনি গর্বভরে বাবাকে জানালেন, তিনি সমস্ত উট দান করে এসেছেন, যা তাদের পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি করবে।

কিন্তু হাতিমের পিতা অকালেই মারা যান। তাকে লালন-পালন করেন তার দাদু, যার জন্য কাজটি সহজ ছিল না। কারণ, হাতিম যা কিছু পেতেন, তাই দরিদ্রদের দান করে দিতেন, ফলে তার দাদুর সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে।

বড় হয়ে তিনি তায়ী গোত্রের নেতা হন এবং তখনই তার কবিতার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। প্রতিদিন রাতেই তিনি নিজের গোত্র এবং অন্যান্য গোত্রের মানুষদের অনন্য কবিতা শোনাতেন, যার তুলনা ছিল খুব কম।

খ্যাতির পথে যাত্রা

এক রাতে কিছু পথিক, যাদের মধ্যে তিনজন কবিও ছিলেন, হাতিমের আশ্রয় চাইলেন। উদার মনের হাতিম শুধু তাদের আশ্রয়ই দিলেন না, বরং নিজের তিনটি উট জবাই করে তাদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। এই দৃষ্টান্ত দেখে অতিথিরা মুগ্ধ হয়েছিলেন।

এরপর থেকে হাতিমের কবিতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তার কবিতায় প্রথমবারের মতো বীরত্ব ও সাহসিকতার কথা ফুটে ওঠে। তার কবিতা পশ্চিমা সাহিত্যেও প্রভাব ফেলেছিল, যেখানে সাহসী নাইটদের গল্প বলা হতো, যারা বিপদে পড়া নারীদের রক্ষা করত।

ইতালির কূটনীতিক ও কবি বোক্কাচ্চিও তার দ্য ডেকামেরন কবিতায় হাতিমকে "নাথান" নামে উল্লেখ করেন। সেখানে বলা হয়, নাথানের দানশীলতা এতই বেশি ছিল যে, এতে রাজাও অপমানিত বোধ করেন। রাজার আদেশে নাথানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি হাসিমুখে তা গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত রাজা নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং তাকে মুক্তি দেন।

উত্তরাধিকার

হাতিম আল তায়ী ছয় শতকে মারা গেলেও তার নাম আজও উদারতা ও দয়ার প্রতীক। আরবি ভাষায় "তুমি হাতিমের মতো দয়ালু" বলা হলে, সেটাই সর্বোচ্চ প্রশংসা হিসেবে ধরা হয়।

তার মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পর, পারস্যের লেখক কাশিফি তার জীবনী নিয়ে "টেলস অব হাতিম" লেখেন, যা পরে তুর্কি ভাষায় অনূদিত হয়ে অটোমান সুলতান সুলেমান-এর কাছে পৌঁছে যায়। এরপর হাতিমের নাম পুরো বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

আজও তার জীবন নিয়ে অনেক বই, টিভি সিরিজ, নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরি হয়। শুধু আরব বিশ্ব নয়, পশ্চিমা পণ্ডিতরাও তার জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি আধুনিক কবিতার ভিত্তি স্থাপন করেছেন, যা ১৫০০ বছর পরেও অটুট রয়েছে


#হাতিম_আল_তায়ী #আরব_ইতিহাস #উদারতা #দানশীলতা #কবি #আরবি_সংস্কৃতি #বীরত্ব #ইতিহাস #Hatim_Al_Tai #Arab_History

Labels : #History ,#Islam ,

Post a Comment